২০২৫ সালের মধ্যে ‘বিপিও’তে কর্মসংস্থান হবে ১ লাখ, আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ বিলিয়ন ডলার

digitalsomoy

করোনা মহামারীর প্রভাব লেগেছে বাণিজ্যিক সকল খাতে। অন্য খাতগুলোর মতো বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) খাতও বাদ পড়েনি। করোনাকালে কোনো কল সেন্টার বন্ধ হয়েছে এমন তথ্যও পাওয়া যায়নি, বরং ৭০টি নতুন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)-এর সদস্য হয়েছে। সম্প্রতি এ খাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে দৈনিক ডিজিটাল সময়ের সঙ্গে আলোচনা হয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)-এর সাধারণ সম্পাদক ও ফিফোটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়ে লিখেছেন মাহবুব শরীফ

                           তৌহিদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক (বাক্কো) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ফিফোটেক)

করোনা পরবর্তীতে বিপিও খাতের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যতীত চিন্তাভাবনা করা একেবারেই অসম্ভব । তথ্যপ্রযুক্তির এই সম্ভাবনাময় যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করা । যে প্রতিষ্ঠান তার গ্রাহকদের দ্রুত সময়ে সর্বোচ্চ গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে পারবে সে প্রতিষ্ঠান তত দ্রুত এগিয়ে যাবে। তাই ক্রমেই বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) বিশ্বব্যাপী অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সাধারণত বিভিন্ন ধরণের সেবা যেমন, কল সেন্টার সেবা, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন, বিজনেস ডাটা এন্ট্রি/প্রসেসিং, হিসাব রক্ষন, ডাটা এনালিটিক্স, বিজনেস ফোরকাস্টিং, গবেষনা ও উন্নয়ণ, ডিজিটাল মার্কেটিং, বিক্রয়/বিপণন, গ্রাহক সেবা ও যোগাযোগ ইত্যাদি আউটসোর্সিং করা হয়ে থাকে। বর্তমানে এই শিল্পে নতুন বেশ কিছু সেবা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে যার মধ্যে রয়েছে- ফিন্যানসিয়াল আউটসোর্সিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, ইমেজ প্রসেসিং ইত্যাদি সেবা।’

তৌহিদ হোসেন ডিজিটাল সময়কে আরও জানান, বিপিও প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় প্রতিষ্ঠানে সেবা প্রদানের পাশাপাশি বর্তমানে বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও ব্যাক-অফিস/ফ্রণ্ট-অফিস সেবা প্রদানের মাধ্যমে বিপিও কোম্পানিগুলো প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে ।বর্তমানে বাংলাদেশে বিপিও শিল্পের বাজার মূল্য ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ইতোমধ্যে ৬০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এই শিল্পে । এই ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ, বাক্কোর সঠিক তত্ত্বাবধায়ন এবং বাক্কো সদস্যদের নিরলস প্রচেষ্টার জন্য । দেশের বিপিও প্রতিষ্ঠানে জনবল বৃদ্ধির এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক ২০২৫ সালের মধ্যে এ খাতে ১ লাখ লোকবল কাজ করবে এবং আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হবে ১ বিলিয়ন ডলার।

করোনাকালীন সময়ে বিপিও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছে? তৌহিদ হোসেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমাদের দেশের বিপিও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা দিয়ে থাকে। করোনার কারণে আন্তর্জাতিক অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ কমিয়ে দিয়েছে। সেফটি ও সিকিউিরিটির কারণেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মী কমাতে থাকে। সব মিলিয়ে গত এক বছরে আমাদের কাজ অনেক কমে গিয়েছিল।’

তিনি জানান, করোনা মহামারীর জন্য বিপিও শিল্পের প্রায় ৭০% প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওয়ার্ক অর্ডার এবং চুক্তি স্থগিত ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাতিল করতে শুরু করে । মহামারীর শুরু থেকেই বাক্কো তার সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঠিক পরামর্শ প্রদান, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচারণা বৃদ্ধিকরণ এবং সরকারের আর্থিক প্রণোদনা সদস্যদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়াসহ বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে বিপিও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো আবার ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে এবং আমরা আশাবাদী ২০২২ সালের মধ্যে এই শিল্প পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াবে ।

বিপিও খাতের মাধ্যমে কি পরিমাণ রপ্তানি আয় হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, বিপিও খাতের মাধ্যমে দেশে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় হয়, তবে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ২০২৫ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করা । এই লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে বাক্কো ইতোমধ্যে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ।’

বিপিওতে বাক্কর চ্যালেঞ্জগুলো কী কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ বিপিও খাত নিয়ে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো- দক্ষ জনশক্তি তৈরি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন বৃদ্ধি করতে পারলে খুব দ্রুত বাংলাদেশের বিপিও শিল্প বিশ্ববাজারে শীর্ষস্থান দখল করতে পারবে বলে মনে করি।’

তিনি আগামি ৫ বছরে বিপিও শিল্পে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে প্রথম সারিতে দেখতে চান।

প্রতিবছর এই খাতে প্রায় ১০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, যা আগামী বছর দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তৌহিদ হোসেন।

বিপিও খাতে যারা কাজ করতে আগ্রহী তাদের কেমন যোগ্যতা থাকা আবশ্যক সে বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে, বিপিও শিল্পে সকল দক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থান হতে পারে। এমন কি, যদি কেউ শুদ্ধ বাংলা বা ইংরেজিতে কথা বলতে পারে তার জন্যও এই শিল্পে রয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ । তাছাড়া যাদের কমিউনিকেশন স্কিল ভালো, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও এডিটিং, ডাটা এন্ট্রি, ডেটা অ্যানালিটিক্স, টেলিসেলস এর উপর ভালো দক্ষতা রয়েছে তারা সহজেই ভালো করতে পারে এই শিল্পে ।

নতুনরা কেন এ পেশায় আসবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই পেশায় একজন কর্মী একাধারে অনেকগুলো দক্ষতা অর্জন করতে পারে, যেটা অন্য শিল্পে সম্ভাব না । কমিউনিকেশন স্কিল, সেলস স্কিল, লিডারশিপ স্কিল বৃদ্ধির পাশাপাশি এখানে একজন কর্মী পাচ্ছেন চমৎকার কর্মপরিবেশ, এছাড়া পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজ করে উপার্জন করারও সুযোগ থাকছে । শুধু পেশা হিসেবে নয়, উদ্যোক্তা হিসেবে ও রয়েছে অপার সম্ভাবনা এই শিল্পে ।’

‘বর্তমান প্রজন্মের প্রতি আমার প্রত্যাশা হচ্ছে, সবসময় পড়াশোনা শেষ করার পর কিছু করার চিন্তা করি, ফলে আমাদের বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করতে অনেক সময় লেগে যায়, যদি আমরা পড়াশোনা চলাকালীন অবস্থায় এই দক্ষতাগুলো অর্জন করতে পারি, তাহলে আমরা অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকব এবং এই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে কর্মজীবনেও দ্রুত উন্নতি করা সম্ভব কিংবা সফল উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব । তথ্য প্রযুক্তির সর্বশেষ আবিষ্কার, ব্যবহার এবং রূপান্তরের বিষয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, জানতে হবে এবং নতুনত্বের অন্বেষণ করতে হবে।’ এমন বলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)-এর সাধারণ সম্পাদক ও ফিফোটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদ হোসেন।