বেসিস নির্বাচন ২০২২: কেমন নেতৃত্ব চান সদস্যরা

digitalsomoy

নির্বাচন মানেই মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে কে বা কারা হচ্ছেন নতুন মেয়াদের নেতা। কে বসছেন ক্ষমতার মসনদে। কে হচ্ছেন নতুন প্রেসিডেন্ট, চেয়ারম্যান বা সেক্রেটারি। একইভাবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নেতৃত্বদানকারী শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সদস্যরাও এর থেকে পিছিয়ে নেই।

বেসিস ২০১৮-২০২০-এর মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটির সময় শেষ। আগামী ২০২২-২০২৩ এর নতুন মেয়াদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের মৌসুম শুরু হওয়ার আগে থেকেই সদস্যদের মধ্যে এই নিয়ে শুরু হয়ে গেছে নানান জল্পনা-কল্পনা, চুলচেরা বিশ্লেষণসহ আলোচনা-সমালোচনা। বেসিস নির্বাচন নিয়ে বরাবরের মতো এবারও তথ্যপ্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আগ্রহের শেষ নেই।

এবারে অনুষ্ঠেয় বেসিস নির্বাচন ২০২২ ভাবনা নিয়ে দৈনিক ডিজিটাল সময়ের সাথে কথা বলেছেন কয়েকজন সচেতন সদস্য। আলাপকালে জানালেন নির্বাচন নিয়ে নিজেদের ভাবনা-চিন্তা ও গঠনমূলক মতামত এবং প্রয়োজনীয় কিছু পরামর্শ। আলোচনায় উঠে এসেছে সদস্যরা বেসিসের নতুন কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে কেমন প্রার্থী চান, কেমন প্রার্থী আসা উচিত, প্রাণের সংগঠন হিসেবে বেসিসকে কীভাবে দেখতে চান, বেসিসের সদস্যদের উন্নয়নে কী কী করা যেতে পারে, বেসিসকে আরো গতিশীল করতে নতুন বোর্ডের সদস্যরা কী কী পদক্ষেপ নিতে পারেন ইত্যাদি নানান বিষয়। সদস্যদের মতামতগুলো ডিজিটাল সময়ের পাঠকদের জন্য এখানে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো।

এবারের বেসিস নির্বাচন নিয়ে ভাবনা সম্পর্কে বাংলাদেশী অনলাইন মুদি এবং খাদ্য পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান চালডাল ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) জিয়া আশরাফ ডিজিটাল সময়কে বলেন,  ২০২১ সালের অনুষ্ঠেয় বেসিস নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করতে চাই। আমি নমিনেশন পেপার সাবমিট করবো। তবে কোন প্যানেল থেকে করবো এবিষয়ে কিছুই ভাবিনি। আমি নমিনেশন পেপার সাবমিট করবো এই কারণেই যে, আমি চাই বেসিসের মধ্যে একটা ই-কমার্সের ভাল রকামের রিপ্রেজেন্টেশন থাকুক। বেসিসের মেম্বাররা যারা ই-কমার্স করতে চান তারা ই-কামার্স নিয়ে  সঠিক পথে এগিয়ে যাক। আমি নিশ্চিত যে ৬০% মেম্বাররা ই-কমার্স করতে চান না। বাকি যে ৪০% মেম্বাররা ই-কমার্স করতে চান আমি কিন্তু তাদেরকে সঠিক দিকনির্দেশনায় সাপোর্ট দিতে পারবো। কেননা এ বিষয় আমার দীর্ঘ দিনের কাজের প্র্যাক্টিকেল জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আছে। আপনি তো জানেন আমার নিজের উদ্যোগ অনলাইন মুদি এবং খাদ্য পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান চালডাল ডটকম    ইতোমধ্যেই  দেশীয় ই-কমার্সের বাজারে একটা ভাল অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এবং দেশের সকল শ্রেণির মানুষের কাছে অবদান রাখতে পারছে। আমি মন থেকে চাই যারা ই-কমার্স নিয়ে কাজ করছেন তাদের কাছে আমার অর্জিত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও দক্ষতা শেয়ার করতে। তাদের ব্যবসা উন্নয়নে পাশে থাকতে। আমার সাপোর্টে আরো বড় বড় দেশীয় উদ্যোগ গড়ে উঠুক। অসংখ্য বেকার তরুণরা খুঁজে পাক নিজেদের ই-কামর্স নিয়ে ক্যারিয়ার এমনটাই চাই আমি। আমি নেতৃত্বে এলে এই বিষয়গুলোতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে চাই।

কেমন প্রার্থী প্রত্যাশা করেন?  একজন সাধারণ মেম্বার হিসেবে জিয়া আশরাফ বলেন, একজন মেম্বার হিসেবে আমি এমন ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসেবে চাই, যে বা  যারা বেসিসের কল্যাণে নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করেন, অন্তর দিয়ে বেসিসের সার্বিক উন্নয়নের কথা ভাবেন, যিনি হৃদয় দিয়ে ‍উপলব্ধি করেন বেসিস কী, কেন বেসিস সংগঠনটা গঠিত হয়েছিল, বেসিসের মূল লক্ষ্যটা কী এবং বিষয়গুলো হৃদয়ে ধারণ করবেন। এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে একজন বোর্ডে এসে তিনি আমাদের কি উপহার দেবেন? মেম্বাররে জন্য কী অবদান রাখবেন? আর যারা উপরের বিষয়গুলো হৃদয়ে ধারণ করবেন সে যে প্যানেলেরই হোক আমি তাকে ভোট দেবো। বিষয়টা কিন্তু একটা অ্যাসোসিয়েশনের সার্বিক বিষয়ের।

বেসিসের পরিচালনার জন্য কেমন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক বলেন, একটা অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালকের অনেক দায়িত্ব থাকে। একজন পরিচালকের চিন্তা করা উচিত ক্ষমতার দিকে থেকে। ধরেন, সরকারের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার সাথে কথা বলা কাজটা সবাই করতে পারবেন। তাহলে পরিচালক হিসেবে তার কাজটা কী? বেসিসের একজন সাধারণ সদস্য যখন সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার  সাথে কথা বলতে বা দেখা করতে যাবেন তখন তার কথাগুলো গুছিয়ে দেওয়া, কীভাবে কথাগুলো বলতে হয়, উপস্থাপন করতে হয়, কোন কথাগুলো বললে সহজে কাজটা হয়ে যাবে সেই জায়গাটাতে মেন্টরের ভূমিকা পালন করা। বিভিন্ন সময় মেম্বাররা ব্যবসা সংক্রান্ত নানান সমস্যায় পড়েন। তখন বেসিসের পরিচালকদের মেম্বারদের সহযোগিতা করাটা দায়িত্বে এসে যায়। যারা পরিচালক হিসেবে আসবেন তারা যাতে এসব ইস্যুতে দ্রুত পদক্ষেপ নেন এবং প্রয়োজনীয় সমস্যার সমাধান করেন।

আমি মন থেকে চাই যারা সততা ও আন্তরিকতা দিয়ে ডেডিকেটেডলি কাজ করবে তারাই নেতৃত্বে আসুক। পরিচালনা কার্যকরী পরিষদে মেম্বারদের কল্যাণে অনেক কাজ করতে হয়। পলিসি লেভেলে সরকারের সাথে, দেশের ও আন্তজার্তিক বিভিন্ন কোম্পানির সাথে কাজ করতে হয়। তাই আমি বলবো যাদের সংগঠনের সদস্যদের কল্যাণে সময় দেওয়ার মনমানসিকতা রয়েছে তারাই ‍শুধু এই নতুন বোর্ডে নেতৃত্বে আসুক।

আর নেতৃত্বের আর একটা বিষয়ে বলতে চাই সেটা হলো, যারাই আসুক তারা যেনো একটা বিশেষ বিষয়ে দক্ষ হয়ে থাকেন। যেমন, সফটওয়্যার সেক্টর, ই-কমার্স সেক্টর, লোকাল মার্কেট, ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট ইত্যাদি যেকোন একটা বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। তাহলে কী হবে? যার যে বিষয়ে দক্ষতা রয়েছে অ্যাসোসিয়েশনকে সে দিক থেকে সাহায্য করতে পারবেন। এখানে সব সেক্টরের সদস্য রয়েছেন। সবার বিভিন্ন দিক থেকে সাহায্য-সহযোগিতা দরকার রয়েছে।

আর একটা বিষয় আমি বলতে চাই সেটা হলো, ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে, মেম্বারদের সাথে কাজ করার আন্তরিক ইচ্ছা রয়েছে এমন সিনিয়রদের আমি নেতা হিসেবে চাই। সেই সাথে তরুণদেরও চাই। কেননা ইন্ডাস্ট্রিতে তরুণদের মধ্যেও অনেক মেধাবী, প্রতিভাবান, যোগ্য, নেতৃত্বদানকারী দক্ষ ব্যক্তি রয়েছেন। যাদের কোম্পানি ভাল করছে। ভাল একটা অবস্থান তৈরি করেছে। তাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা দিয়ে সংগঠনকে নতুন নেতৃত্ব দিতে পারে। নতুন ও পুরান মিলে বোর্ড হলে নেতৃত্ব হবে আরো বেশি গতিশীল বলে আমার বিশ্বাস।

 এবারের বেসিস নির্বাচনে কেমন প্রার্থী আসা উচিত, জানতে চাইলে ইজেনারেশানের চেয়ারম্যান সৈয়দা কামরুন আহমেদ  ডিজিটাল সময়কে বলেন, বেসিস আমাদের আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে নেতৃত্বদানকারী শীর্ষ বাণিজ্যিক সংগঠন। আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে যাদের দীর্ঘ সময় ধরে কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা রয়েছে, সদস্যদের সাথে ভাল সম্পর্ক, যোগযোগ রয়েছে, সর্বোপরি পুরো আইটি ইন্ডাস্ট্রিকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম এমন সিনিয়র সদস্যদের নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করা উচিত বলে মনে করি। শুধু সিনিয়র সদস্যই নয়, তাদের সাথে আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে নেতৃত্বদানকারী, দক্ষতাসম্পন্ন কয়েকজন তরুণদের অংশগ্রহণ করাও প্রয়োজন রয়েছে। নবীন-প্রবীণ মিলে বোর্ড হলে কাজে আসবে নতুনত্ব। কেননা বেসিস যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করে, বিশেষ করে সফটওয়্যার খাত, এই সফটওয়্যারকে নিয়ে এক্সপার্ট ব্যক্তিত্বদের নেতৃত্বে আসা দরকার। তাহলে তারা সদস্যদের প্রয়োজনগুলো সহজে বুঝবেন, যেকোন সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে পারবেন। তবে একটা বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো বোর্ডের কার্যকরী সদস্যদের এমন কাজ ও আচরণ করা উচিত যাতে পরের মেয়াদে যারা আসবেন তারা যেনো কিছু শিখতে পারেন। নেতাদের দেখে সাধারণত বাকিরা শিখে থাকেন।

 নতুন বোর্ডের নেতাদের উদ্দেশে সৈয়দা কামরুন আহমেদ বলেন, আমরা যারা ব্যবসা করি আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এর পাশাপাশি যখন আমরা কমিটমেন্ট করি যে অ্যাসিয়েশনকে টাইম দিবো, তখন আমাদের নিজের মধ্যে এই উপলব্ধি থাকতে হবে যে, আমার ব্যবসা পরিচলানার পাশাপাশি একটা নির্দিষ্ট সময় অ্যাসিয়েশনকে দিতে হবে। এর জন্য পার্টনারের সাথে বিষয়টা ভালভাবে বোঝাপড়া করে অ্যাসিয়েশনকে সময় দিলে সংগঠনের সমস্যা হবে না। নিজেরও ব্যবসা ঠিক থাকবে। দায়িত্ব নিয়ে যাতে সবাই কমিটমেন্টের জায়গাটাতে ঠিক থাকেন।

একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে বেসিসের কাছে থেকে প্রত্যাশা সম্পর্কে তিনি বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সদস্যদের কল্যাণে বিভিন্ন পলিসি তৈরি এবং সংশোধনে সরকারকে সহযোগিতা করে থাকেন। বেসিস আইসিটি খাতের শীর্ষ বাণিজ্যিক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও এর অরো অনেক বেশি গ্রোথ প্রটেনশিয়াল আছে। আমার দৃষ্টিতে এগুলো হলো, আমাদের সদস্যরা ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে যে সমস্যাগুলো ফেস করছে। যেমন, পলিসি লেভেলে বা ব্যবসা করার যে পরিবেশ সেটা হতে পারে, এমনকি এখন আমার প্রচুর বাইরের দেশের আইটি কোম্পানির সাথে এক সাথে কাজ করছি বা নলেজ ট্রান্সফার করছি সেটা হতে পারে। আমাদের দেশের রিসোর্স বিল্ডিং নিয়ে সরকারের সাথে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় আইটিতে রিসোর্স তৈরিতে একটা বিশাল ঘাটতি আছে। সেই জায়গায় এডুকেশন সিস্টেম বা শুধু ট্রেনিং না, গঠনমূলকভাবে কীভাবে সেগুলো রিসোর্স তৈরির বিষয়গুলোতে নিয়ে আসা যায়। আবার সদস্যরা বিভিন্ন সময় ব্যবসার কাজে ভ্যাট এবং ট্যাক্সের বিষয়ে নানান ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হন। এখন আমরা যদিও ট্যাক্স ফ্রি আছি। একটা সময় যখন আমাদের টেক্সেশনের ভিতর দিয়ে যেতে হবে তখন আরো সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। তখন যেন আমরা সঠিকভাবে ইভালুয়েটেড হই। সেই জায়গাগুলোতে সরকারের সাথে কাজ করা। সদস্যদের সাথে নিয়মিত মিট করে তারা ব্যবসা করতে গিয়ে কি ধরনের সমস্যা ফেস করছে সেগুলো নিয়ে কথা বলা আর তাদের সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করা।

একজন সদস্য হিসেবে গত মেয়াদের বোর্ডের কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন জানতে চাইলে বেসিসের সাবেক জয়েন্ট সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল ডিজিটাল সময়কে বলেন, এই বোর্ডের কাছে সবচেয়ে বড় যে সহযোগিতাটা পেয়েছি সেটা হলো, আসলে আমাদের ইন হাউজ যে কাজগুলো এসময়টাতে করা হয়েছে সেগুলো আগের মেয়াদগুলোতে করা হয় নাই। উদাহরণ হিসেবে বলি যে, আমাদের ওয়েবসাইট তৈরি। অনেক দিনের একটা তাগিদ ছিল যে আমাদের একটা আধুনিক ও উন্নতমানসম্পন্ন একটা ওয়েবসাইট থাকবে। যেটার মাধ্যমে আমাদের নিজেদের মধ্যে সব তথ্য আদান-প্রদান, পে-মেন্ট করতে পারবো। এই কাজটা বেসিস প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমরা সুন্দরভাবে করতে পারিনি। এই বোর্ড এসে আমাদের জন্য সর্বাধুনিক ও উন্নত একটা ওয়েব পোর্টাল উপহার দিয়েছে। সেই সাথে অত্যাধুনিক একটা মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে। যার মাধ্যমে আমাদের সব বিল-পে-মেন্টগুলো ঘরে বসে করতে পারছি। এখন আর আমাদের বাইরে যেতে হচ্ছে না। এর জন্য বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই।

এর সাথে এই মেয়াদে বেসিস মেম্বারদের জন্য আরো বেশ কিছু লক্ষ্যণীয় কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যেমন  আমি লোকাল মার্কেট স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান। লোকাল মার্কেটের জন্য আমরা যখন যা চেয়েছি তখন সেটাই করতে পেরেছি। যেমন আমরা চেয়েছিলাম যে,  করোনা পরবর্তী সময়ে যে অবস্থা হয়েছে, সব কোম্পানি চায় যে আমাদের সব সার্ভিসগুলো অটোমেশন করা হোক। তাই সেই কারণে  আমরা সফটওয়্যার অ্যান্ড সার্ভিস মডেল নিয়ে ক্লায়েন্টের কাছে যেত চাচ্ছিলাম। বেসিসের এই বোর্ড সেই সাপোর্টটা দিয়েছে।  এর জন্য আমরা এসএমই ফাউন্ডেশনের সাথে বেশ কিছু প্রোগ্রাম করেছি।  এসএমই ফাউন্ডেশন তাদের মেম্বারদেরকে এনেছে। আমরা আমাদের মেম্বারদেরকে তাদের কাছে নিয়েছি।  আমরা তাদের জানিয়েছি তোমরা এই সফটওয়্যারটা নিতে পারো। এর জন্য আগের মতো আর বেশি টাকা খরচ করতে হবে না।  মানথলি রেন্টার হিসেবে নিতে পারো। এই কাজটা আমাদের লোকাল মার্কেট তৈরির জন্য আসলে বিশাল একটা অবদান রাখতে পেরেছে। আমার দৃষ্টিতে চলতি মেয়াদের বোর্ড  এই দুটা কাজ তারা খুব ভালভাবেই সম্পন্ন করেছে। এছাড়াও তো পলিসি লেভেলের অনেক কাজ আছে যেগুলো তারা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।

এবারের নির্বাচনে কেমন প্রার্থী প্রত্যাশা করেন? বেসিস লোকাল মার্কেট স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, আমি এই প্রশ্নের উত্তরটা এভাবে দিতে চাই। প্রথমত, একজন মেম্বার হিসেবে আমি এমন ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসেবে চাই, যিনি হৃদয় দিয়ে বুঝতে পারবেন যে  বেসিস কী, বেসিসের মূল লক্ষ্যটা কী, বেসিস কেন তৈরি হয়েছে, বেসিস কি করতে পারে, কি করা উচিত আর কোনটা করা উচিত না। এই বিষয়গুলো যে বুঝবেন তাকেই আমি নির্বাচনে প্রর্থী হিসেবে চাইবো। এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।

দ্বিতীয়ত যে বিষয়টা তার মধ্যে থাকতে হবে সেটা হলো, তাকে যেকোনো একটা ডোমেইনের এক্সপার্ট হতে হবে। ধরেন আমাদের এখানে অনেকগুলো ডোমেইন আছে। লোকাল, ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট আছে, ই-কমার্স, এডুকেশন সেক্টর আছে ইত্যাদিসহ আরো বেশি কিছু কাজের সেক্টর  রয়েছে। সুতরাং তাকে অবশ্যই কোন না কোন ডোমেইনের এক্সপার্ট হতে হবে। যাতে সে ওই ডোমেইনের জন্য  বোর্ডে এসে অবদান রাখতে পারেন। যেমন আমি যদি সফটওয়্যারের লোক হই তাহলেই কিন্তু বোর্ডে আসলে সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর যে সমস্যা হয়ে থাকে সেটা আমি বুঝতে পারবো এবং সে অনুসারে আমি কনট্রিবিউশনটা দিতে পারবো।

তৃতীয়ত হচ্ছে, তাকে এখানে ডেডিকেটেডলি কাজ করার জন্য সময় দিতে হবে। এটা তাকে ভাল করে মাথায় রাখতে হবে যে, নির্বাচন করলাম, একটা নেতা হয়ে গেলাম, আসলে এটা কিন্তু গ্লামারার্সের কোন ব্যাপার না। এখানে কিন্তু প্রচুর সময় দিতে হয়। এখানে মেম্বারদের কল্যাণে অনেক কাজ করতে হয়। সরকারের সাথে, দেশের ও আন্তজার্তিক অসংখ্য বড় বড় কোম্পানির সাথে কাজ করতে হয়। ব্যক্তিগত কাজের বাইরেও এই বোর্ডে যদি কাজ করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই সময় দেওয়ার মনমানসিকতা থাকতে হবে।

চতুর্থত যে বিষয়টাতে বলবো, আমি এমন কোন প্রার্থীকে চাই না যারা শুধু নির্বাচনের সময় মৌসুমী পাখির মতো আমাদের কাছে আসেন। নির্বাচন শেষ তাদের আর কোন খবর নেই। আবার যখন নির্বাচন আসে তখন তারা এসে হাজির হন। এমন কোন প্রার্থীকে আমরা দেখতে চাই না।

পঞ্চমত হচ্ছে, যারা আগের বোর্ডে ছিলেন কিন্তু মেম্বারদের জন্য কোন কিছুই করতে পারেননি এমন প্রার্থীদের আমি কোন দিনও চাইবো না।  কারণ তাকে তো আমরা আগে সুযোগ দিয়েছিলাম। সে নির্র্বাচনে পাস করার পরে একটা দিনের জন্যও আমাদের মেম্বারদের জন্য কোন মিটিংয়ে আসেননি। পাস করার পরে মেম্বারদের জন্য কোন কন্ট্রিবিউশন রাখতে পারেননি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে এমন কোন প্রার্থী অবশ্যই চাইবো না। আমরা চাইবো যারা ডেডিকেটেডলি, সততা ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করবে এবং সময় দিবে।

এবারের নির্বাচনে কেমন প্রার্থী আসা উচিত বলে মনে করেন জানতে চাইলে চলতি মেয়াদের কার্যনিবাহী পরিষদের পরিচালক রাশাদ কবির ডিজিটাল সময়কে বলেন, আমি সব সময় বিশ্বাস করি ট্রেডবডির জন্যে নবীন-প্রবীণের কম্বিনেশনে একটা বোর্ড তৈরি করা প্রয়োজন। আপনি বিশ্বের সাকসেসফুল ট্রেডবডিগুলোর দিকে তাকান, সবখানেই কিন্তু এভাবেই ফর্মেশনটা আছে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে যাদের দীর্ঘ দিনের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে বা আগের বোর্ডে কাজ করেছেন, এখানে যেমন তাদের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে, তেমনি নতুনদেরও বোর্ডে প্রয়োজন রয়েছে।

বোর্ডে সিনিয়র ও অভিজ্ঞদের কেন প্রয়োজন জানতে চাইলে রাশাদ কবির  বলেন, কারণ বোর্ডের সদস্যদের সরকারের সাথে ও আন্তজার্তিক বড় বড় কোম্পানির সাথে কাজ করতে হয়, পলিসি লেভেলে ডায়ালগ করতে হয়। এসব কাজের জন্য অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। অভিজ্ঞতা ছাড়া এসব কাজগুলো সাকসেসফুলিভাবে করা কঠিন। আর দ্বিতীয়ত, তরুণদেরও থাকাটা খুবই জরুরি। কারণ নতুনরা যদি এগিয়ে না আসেন তাহলে পরে একটা জেনারেশন গ্যাপ বা নেতৃত্বের একটা গ্যাপ তৈরি হবে। তাই আমি এটাই বিশ্বাস করি নবীন-প্রবীণ মিলে একটা বোর্ড তৈরি করা প্রয়োজন।

বেসিস সদস্যদের জন্য নেওয়া উদ্যোগগুলো সম্পর্কে বেসিসের এই পরিচালক বলেন, বিগত বোর্ডগুলো কাজের যে ধারাবাহিকতা রেখে গেছেন, সেই অগ্রজদের দেখানো পথ ধরে সদস্যদের জন্যে এই বোর্ডও অনেক কাজ তথা দেশের সামগ্রিক আইসিটি ইন্ড্রাস্টির জন্যে করেছে।

আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি, যেটা শুধু বেসিসের জন্যে তো বটেই, বাংলাদেশের সকল বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোর মধ্যেও  একটি মাইলফলক হিসেবে থাকবে। উদাহরণ স্বরূপ বেসিস জাপান ডেস্কের কথা বলা যেতে পারে। এটিই বাংলাদেশের যেকোনো ট্রেডবডির ইতিহাসেই প্রথম কান্ট্রি বেইসড ফোকাস ডেস্ক। গত জুনে উদ্বোধন হবার পর থেকেই আমরা এই ডেস্ক থেকে ভালো রকমে সাড়া পেয়েছি। জাপান অ্যাম্বেসী থেকে শুরু করে জাইকা, জেট্রো, জিসা এবং জাপানের অনেক বড় বড় কোম্পানিগুলোও আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছে। আমরাতো আশা করছি, লকডাউন খুলে যাবার পর থেকেই জাপান মার্কেট থেকে আমাদের কোম্পালিগুলো ভালো রকমের ব্যবসা পাবে। আরো একটি বড় ব্যাপার হচ্ছে, জাপানের মার্কেটে আমাদের কোম্পানিগুলোর ব্র্যান্ডিং এবং সুনাম বেশ ভালো রকমের বেড়েছে। আগে শুধু জাপানের কোম্পানিগুলো ভিয়েতনাম, চায়না আর ভারতের কোম্পানিগুলোকেই বিবেচনা করতো। এখন এর সাথে বাংলাদেশকেও খুব ভালোভাবেই বিবেচনা করছে। মজার ব্যাপার, আপনি জেনে অবাক হবেন, ভিয়েতনামের পরেই এখন জাপান মার্কেটে বাংলাদেশের অবস্থান।

জাপান ডেস্কের সাফল্যকে পুঁজি করে আরো ৪টি মার্কেটে এমন ডেস্ক খোলার পরিকল্পনা করছে। একটি ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ড অথবা ডেনমার্ক  একটি যুক্তরাজ্য, একটি যুক্তরাস্ট্র এবং একটি আফ্রিকার কোনো দেশে। আফ্রিকা ফোকাস ডেস্কও খোলা হয়েছে। ২০১৫ সালের পর থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ডও আবার পুনরায় চালু করা হয়েছে এই বোর্ডের সময়। আমি বলছি না আমরা অনেক কিছু করে ফেলেছি, কিন্তু অন্তত এটা বলতে পারি যাত্রাটা শুরু হয়েছে এবং সেটা অনেক ভালোভাবেই হয়েছে। এই কাজগুলোকে যদি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে সামনের দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের একটি শক্ত অবস্থান তৈরি হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। ২০২৫ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে আমাদের যে ৫ বিলিয়ন ডলারের অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা আছে, সেটি আমরা সহজেই অর্জন করতে পারবো।

আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। গত বছরের মার্চের দিকে যখন কোভিডের সংকট শুরু হলো, তখন চারদিক থেকেও অনেক আলোচনা হচ্ছিলো এই বোর্ড কি করছে। আপনার হয়তো মনে আছে, কোভিডের সংকটের শুরুতেই যখন রপ্তানিমুখী কোম্পানিগুলোর জন্যে ৫০০০ কোটি টাকার স্যালারি লোন ঘোষণা করা হয়েছিল, একমাত্র আরএমজি সেক্টর ছাড়া আর কাউকেই ব্যাংকগুলো দিতে ইছুক ছিলো না। আমরাই কিন্তু আইটি কোম্পানিগুলোকে এই লোনের আওতায় নিয়ে এসেছি। আপনি জেনে খুশি হবেন, শুধুমাত্র বিজিএমইএ এবং বেসিসের মেম্বাররাই ওই লোনের সুবিধা পেয়েছে।

আরেকটি সমস্যার পর আমরা দেখছিলাম, আমাদের অধিকাংশ আইটি কোম্পানিগুলোর যেহেতু লোনের অভিজ্ঞতা নেই, আমাদের কোম্পানিগুলো লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছিলো। আর যেহেতু, আমাদের আইটি কোম্পানিগুলো ফ্ল্যাট অথবা জমি কোনো কিছু মডগ্যাজ দিতে পারে না, সেহেতু সমস্যাটা আরো বেশি প্রকট ছিলো। আমরা দ্রুতই  দুইটি বাণিজ্যিক ব্যাংক (প্রাইম ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংক) এর সাথে কথা বলে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জামানত বিহীন লোনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমাদের কাছে পাওয়া তথ্যমতে, প্রায় এই পর্যন্ত ৮৫টি কোম্পানি ৫৫ কোটি টাকা লোন পেয়েছে। আমার জানামতে, বেসিস শুরুর পর থেকে এবারই প্রথম জামানতবিহীনভাবে এতগুলি কোম্পানি এত বড় টাকার লোন পেলো।

আরো একটি বড় সাফল্য এই বোর্ডের আছে, সেটি হচ্ছে ক্যাশ ইন্সেনটিভ চালু করা। এই পর্যন্ত ২১১টি কোম্পানি ২৫০ কোটি টাকার ক্যাশ ইন্সেনটিভ গত ২.৫ বছরে পেয়েছে। দেখুন টাকার অংকটা কিন্তু একেবারে কম না। আমি এক্ষেত্রে সরকারকেও ধন্যবাদ জানাবো তাদের সহযোগিতার জন্যে। আমরা এখন সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, ক্যাশ ইন্সেনটিভির পরিমাণটা ১০% থেকে ২০% করা হোক।

লোকাল মার্কেট সম্প্রসারণের ক্ষেত্রেও এই বোর্ড অনেক ভূমিকা রেখেছে। আপনারা জানেন, আগামী ৫ বছরে সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয় এবং ৩৫০টি ডিপার্টমেন্টের সর্বমোট ২৮০০ সার্ভিস অটোমেশনের পরিকল্পনা আছে। প্রায় ২০০০ কোটি টাকার বাজার শুধু লোকাল গভর্মেন্ট মার্কেটেই তৈরি হতে যাচ্ছে। এটি কিন্তু বেসিসের সাথে আলোচনা করেই হয়েছে।

আপনারা এটাও জানেন, সরকারি কাজের আগে সিন্ডিকেটের অভিযোগ ছিলো। আমরা কিন্তু বেসিসের তরফ থেকে চাপ প্রয়োগ করে অনেকটাই সেটা কমিয়ে আনতে পেরেছি। আমরা বলছি না, সিন্ডিকেট এখন আর একেবারেই নেই, কিন্তু এটা অন্তত বলতে পারি বেশ ভালো কাজ হয়েছে। এখন দেখবেন, সরকারি কাজ কিন্তু নামসর্বস্ব কোম্পানিগুলো আর পাচ্ছে না। ভালো কোম্পানিগুলোই কাজ পাচ্ছে। পুরাতন কোম্পানিগুলোর সাথে সাথে নতুন কোম্পানিগুলো কিভাবে সরকারি কাজে ঢুকতে পারে, সেটি নিয়েও আমরা এখন পলিসি লেভেলে কাজ করছি।

একটি ট্রেডবডি কখনো কারোর ব্যবসা করে দিবে না, কিন্ত ব্যবসা করার ক্ষেত্র তৈরি করে দিবে। দেশের আইটি সংগঠনগুলোর এপেক্স ট্রেডবডি হিসবে বেসিস এখন সেই কাজটিই করছে। এর অনেক কিছুই হয়তো আমরা মিডিয়াতে আসে না, কারণ প্রচারণার চেয়ে নীরবে কাজ করে যেতেই আমরা বেশি পছন্দ করি।

বি.দ্র. বেসিস নির্বাচন ২০২২ নিয়ে সদস্যদের মতামত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করবে দৈনিক ডিজিটাল সময়। যারা এতে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী তাদেরকে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ভাবনা-চিন্তাগুলো ডিজিটাল সময়ের digitalsomoy@gmail.com এই ই-মেইলে পাঠাতে অনুরোধ করা যাচ্ছে।