বিটিআরসির নতুন নির্দেশনা , ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর

digitalsomoy

মোবাইল ফোনে কলড্রপ, কলড্রপ সংক্রান্ত তথ্যাদি এবং গ্রাহককে টকটাইম ফেরত প্রদানের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ প্রদানের নিমিত্ত অপারেটরদের জন্য নতুন নির্দেশিকা চালু করেছে বিটিআরসি।

অন নেট (একই অপারেট) কলড্রপের ক্ষেত্রে গ্রাহকের আর্থিক এবং মানসিক ক্ষতি বিবেচনায় ক্ষতিপূরণ হিসাবে দৈনিক ১ম ও ২য় কল ড্রপের ক্ষেত্রে প্রতিটি কল ড্রপের জন্য ৩টি করে পালস (প্রতি কলড্রপের জন্য ৩০ সেকেন্ড) টকটাইম দিতে হবে।

এছাড়া পরবর্তী ৩য় থেকে ৭ম কলড্রপের প্রতিটি কল ড্রপের জন্য ৪টি পালস বা ৪০ সেকেন্ড করে গ্রাহককে টকটাইম ফেরৎ দিতে হবে। কলড্রপের পরিমাণ গ্রাহকরা এসএমএসের মাধ্যমে জানতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ।

মোবাইল অপারেটরদের সোমবার এ নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি)। আগামী ১ অক্টোবর থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) কমিশনের প্রধান সম্মেলন কক্ষে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব)  শ্যাম সুন্দর সিকদার এর সভাপতিত্বে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমান অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।

শুরুতে কলড্রপ সংক্রান্ত নতুন নির্দেশিকা সর্ম্পকে বিশদ উপস্থাপনা করেন বিটিআরসি’র সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: নাসিম পারভেজ। নতুন নির্দেশিকায় যে সকল বিষয় রয়েছে তা হলো:

ক) জবাবদিহিতা ও গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিতে সকল মোবাইল অপারেটর অভিন্ন USSD কোডের (*121*765# )মাধ্যমে একজন গ্রাহক পূর্ববর্তী দিন/ সপ্তাহ/মাসিক অন-নেট কলড্রপের পরিমাণ জানতে পারবে যা ০১ অক্টোবর ২০২২ খ্রি. থেকে কার্যকর হবে।

খ) অন-নেট কলড্রপের ক্ষেত্রে গ্রাহকের আর্থিক এবং মানসিক ক্ষতি বিবেচনায় ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতকরণ ও সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্ত ক্ষতিপূরণ হিসেবে দৈনিক ১ম ও ২য় কল ড্রপের ক্ষেত্রে প্রতি কল ড্রপের জন্য ৩টি পালস (৩০ সেকেন্ড) এবং পরবর্তী ৩য় থেকে৭ম কল ড্রপের ক্ষেত্রে প্রতিটি কলড্রপের জন্য ৪টি পালস (৪০ সেকেন্ড ) গ্রাহককে টকটাইম ফেরত প্রদান করবে এবং একই সাথে নিমোক্ত শর্তাদিও অনুসরণ করতে হবে।

১) কল ড্রপের ফলে ফেরতপ্রাপ্ত টকটাইম পরবর্তী দিনের প্রথম কল (০০:০০ ঘন্টা) থেকেই ব্যবহারযোগ্য হবে অর্থাৎ ফেরতপ্রাপ্ত টকটাইমসমূহ সর্ম্পণূরূপে ব্যবহার হওয়ার পূর্বে গ্রাহকের একাউন্ট হতে কল বাবদ কোনো টাকা কর্তন করা যাবেনা।

২) কল ড্রপের ফলে ফেরতকৃত টকটাইমের বিষয়ে গ্রাহককে এসএসএম এর মাধ্যমে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে অবহিত করতে হবে।

৩) কোনো অপারেটর চাইলে কলড্রপ সংঘঠিত হওয়ার পর উক্ত দিন থেকেই কল মিনিট ফেরত প্রদান করতে পারবে।

৪) কল ড্রপের ফেরত প্রাপ্ত টকটাইম ব্যবহারের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ দিন মেয়াদ প্রযোজ্য হবে।

নতুন কলড্রপ নির্দেশিকা একটি মাইলফলক উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, গ্রাহক অর্থ দিয়ে সেবা গ্রহণ করে, তাই অপারেটর কর্তৃক সেই সেবা যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার চেয়ে অপারেটররা টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোয় বিনিয়োগ করলে কল ড্রপের হার কমে যাবে। অপারেটরদের প্রতি তাদের গ্রাহক বৃদ্ধির সাথে সাথে সেবার মান বাড়ানোর আহবান জানান তিনি।

মোবাইল ফোনে কলড্রপ কখনো কাম্য নয় মন্তব্য করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে মানসম্পন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য অপারেটরদেরকে নজর দিতে হবে। ভয়েস কলের উন্নতির পাশপাাশি ডাটা স্পিড এর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অপারেটরদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান জনাব সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, মোবাইল অপারটেররা ব্যবসায়ে যতটা আগ্রহী, কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিতে ততটা আগ্রহী নয়। নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী গ্রাহক কলড্রপের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ পাবে এবং গ্রাহকের কলড্রপ সর্ম্পকে বিস্তারিত তথ্যও জানতে পারবে।

কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী মো: মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চ আয়ের মানুষ সকলেই মোবাইল গ্রাহক। প্রতিদিন গ্রাহক যে হারে বাড়ছে সে তুলনায় অবকাঠামো বাড়ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, বিটিআরসি গ্রাহককে একটি মানসম্পন্ন নেটওয়ার্ক প্রদানে বদ্ধপরিকর এবং দ্রুত কলড্রপ সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে।

কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: এহসানুল কবীর বলেন, কোয়ালিটি অব সার্ভিসের নিশ্চিতে কলড্রপ এবং ইন্টারনেট স্পিড অন্যতম। তিনি আরো বলেন, গ্রাহকের তুলনায় বিটিএস এবং তরঙ্গ কম থাকা, লোডশেডিং, রেডিও ইকুইপমেন্ট ও অপটিক্যাল ফাইবারে বিঘ্নতা, নেটওয়ার্ক বুস্টার ও জ্যামারসহ আরো নানাবিধ কারণে মোবাইল ফোনে কলড্রপ হয়ে থাকে। ২০২২ সালে অপারেটরদের অনুকুলে বরাদ্ধ হওয়া তরঙ্গ পুরোপুরি চালু হলে কলড্রপের হার কমে আসবে বলেও জানান তিনি।

কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিতে বেশকিছু পদেক্ষপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ২০২১ এবং ২০২২ সালে তরঙ্গ নিলাম ও টাওয়ার শেয়ারিং গাইডলাইন চালুর পাশাপাশি মোবাইল অপারেটর এবং এনটিটিএন অপারেটদের মধ্যে সাথে দূরত্ব কমানোর কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিটিএস সাইট এর সক্ষমতার তুলনায় কোনো কোনো এলাকায় গ্রাহক বেশি হওয়ায় কলড্রপ বেশি হচ্ছে উল্লেখ করে সেসব জায়গায় সক্ষমতা বাড়াতে অপারেটরদের প্রতি আহবান জানান তিনি। আপাতত অন-নেট ( জিপি-জিপি, রবি-রবি,) এর কলড্রপ নির্দেশিকা প্রণয়ন হলেও বিটিআরসিতে স্থাপিত টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম চালু হলে অফ-নেট ( জিপি-রবি, রবি-বাংলালিংক) কলড্রপের ক্ষেত্রেও নির্দেশিকা বাস্তবায়ন করা হবে।

বিটিআরসি’র সচিব মো: নূরুল হাফিজ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে কমিশনার (লীগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং) আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো: দেলোয়ার হোসাইন, মহাপরিচালক (স্পেকক্ট্রাম) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, মহাপরিচালক (লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং) আশীষ কুমার কুন্ডুসহ বিটিআরসি এবং মোবাইল অপারেটরদের উধ্বর্তন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।