বাংলাদেশের প্রযুক্তিপ্রাণ তারুণ্য শক্তিকে কাজে লাগাতে জাপানি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে অফশোর ডেভেলপমেন্ট সেন্টার স্থাপনে আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। একইসঙ্গে বাংলাদেশের ব্লকচেইন, এআর, ভিআর, আইওটি, রোবটিকস এবং মেশিন লার্নিংয়ের মতো ফ্রিন্টিয়ার টেকনোলজিতে মিত্ররাষ্ট্র জাপানকে বিনিয়োগের পরামার্শ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) জাপান-বাংলাদেশে বি টু বি অনলাইন বৈঠকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী।
এক্ষেত্রে সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি তুলে ধরে তিনি বলেছেন, এখানে অর্থনীতির প্রায় সকল ক্ষেত্রেই বিনিয়োজিত অর্থের পরিমাণে কোনো সীমাবদ্ধতা বেধে দেয়া হয়নি। উপরন্তু এখানে তৈরি সফটওয়্যার রফতানিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হয়েছে। ১০ শতাংশ ক্যাশ ইনসেনিটভ দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকার দীর্ঘমেয়াদী মূলধনী এবং স্বল্পমেয়াদী পরিচালন খরচ মেটাতে সহায়তা করছে।
অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বাংলাদেশ বৈশ্বিক অনলাইন পেশাজীবীদের ৬০ শতাংশই মেটাচ্ছে উল্লেখ করে পলক বলেছেন, আইটি ও আইটিইএস খাতের উন্নয়নে সরকার ৩৯টি হাইটেক পার্ক ৬৪টি শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন সেন্টার ও স্কুল অব ফিউচার এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩০ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করছে। এসব প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যত প্রযুক্তিবিশ্বের উপযোগী জনসম্পদ সৃষ্টি করছে। জাপানের আইসিটি প্রকৌশল চাহিদা মেটাতে এই তরুণরা যথাযথ ও পেশাদার ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বয়স ২৫ বছরের নিচে। দেশের ১৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই তারুণ্য শক্তির অর্ধ লক্ষ্যই প্রতিবছর স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। এই ডিজিটাল স্যাভি তরুণেরাই বিভিন্ন দক্ষতা নিয়ে আইটি এবং আইটি নির্ভর সেবা শিল্পে জায়গা করে নিচ্ছে। এদের কেউ আইটি প্রফেশনাল, কেউবা ফ্রিল্যান্সার কিংবা উদ্যোক্তা।
পলক বলেন, গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর আইসিটি উপদেষ্টা, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে ২০১৯ সালে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে। করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.২ শতাংশ। জনপ্রতি ২০৬৪ মার্কিন ডলার আয় নিয়ে বৈশ্বিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৩৪তম। ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের আগাম অনুমান অনুযায়ী , ২০৩৪ সালের মধ্যে আমরা ২৪তম অর্থনৈতিক দেশে পরিণত হবো। আর এই প্রবৃদ্ধির অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে, সকল ক্ষেত্রেই আইসিটির টেকসই ও স্মার্ট ব্যবহার।
জাপানের বাংলাদেশ দূতাবাসের বিজনেস অ্যাম্বাসেডর ড. আরিফুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমেদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বক্তব্য দেন।
এছাড়াও বক্তব্য দিয়েছেন জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির (জিকা) বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউহো হায়াকাওয়া, জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) এর বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউজি আন্দো, জাপান ইনফরমেশন টেকনোলজি সার্ভিসেস ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (জিসা) আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির কো-চেয়ারম্যান মাসায়ুকি ওসুকা, ফুজিৎসু রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জেনারেল ম্যানেজার ইমামুরা তাকিশি এবং বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির।
বৈঠকে সকলের বক্তব্যেই এই বিটুবি ম্যাচ মেকিং উভয় দেশের জন্যেই সুফল বয়ে আনবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
সূত্রমতে, জাপান ও বাংলাদেশের ১৩০টি কোম্পানির শীর্ষ কর্তারা তিনব্যাপী এই দ্বিপাক্ষিত ব্যবসায় বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে ৭৭টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ৪২টি সফটওয়্যার কোম্পানির সঙ্গে ভার্চুয়াল বিটুবি ম্যাচ মেকিং চুক্তিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।