জোয়ারে ভাসছে ভোলার উপকূল, মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে নিঃস্ব অনেকেই

digitalsomoy

ঘূর্ণিঝড় রিমাল কেটে গেলেও ঝড়ের ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ভোলা। বিশেষ করে জোয়ারের পানি এখনও নামেনি।

টানা ৪ দিন ধরে জোয়ারের পানিতে ডুবে আছে অন্তত ২৫ গ্রাম।

অনেকেই বিধ্বস্ত হওয়া বাড়িঘর মেরামত করতে পারেননি। ফিরে আসতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে।  

সব মিলিয়ে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছে রিমালে বিধ্বস্ত এলাকার বাসিন্দারা।  

যদিও ত্রাণ সহায়তায় এগিয়ে এসেছে জেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ডসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। পুরো জেলায় এখন পর্যন্ত ৩৭৫ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ১৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে ঝড়ের ভয়াবহ তাণ্ডবচিত্রের দেখা মিলল। বিধ্বস্ত এলাকায় রাস্তাঘাট ভেঙে আছে, ঘরবাড়ি ভেঙে চুরমার,  ও গাছপালা উপড়ে পড়ে আছে ঘরবাড়ি ও রাস্তার ওপর।  

ভোলা সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চর ভেদুরিয়া গ্রামের দিনমজুর মনির হোসেন। চারদিন আগে ঝড়ের তাণ্ডবে তার একমাত্র মাথাগোঁজার ঠাঁই ভেঙে যায়। এখন পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে।  

কিন্তু দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরির বেতনে ঘর মেরামত করার সামর্থ্য নাই তার। রীতিমতো অসহায় অবস্থায় পড়ে আছেন তিনি। এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহায়তাও পাননি মনির হোসেন।

এ দিনমজুর বলেন, কীভাবে ঘর মেরামত করবো! কীভাবে জীবিকা চালাব! তার কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ পেলে কিছুটা হলেও সংকট দূর হবে।

শুধু মনির হোসেন নয়, তার মতো যেন একই অবস্থা পুরো গ্রামের। ঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পানি বন্দি হাজার হাজার মানুষ। অনেকের ঘরে জ্বলেনি রান্নাঘরের চুলা। তাই শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটছে তাদের।  

পানিবন্দি রাজিয়া, বিলকিস ও জাকিয়া বেগম বলেন, জোয়ারের পানিতে পুরো এলাকায় ডুবে আছে, এখনও জলাবদ্ধতা। অনেক মানুষ রান্না করতে পারছে না। আমাদেরও একই অবস্থা। ঘূর্ণিঝড় রিমাল কারো ঘর, কারো টিনের চালা, কারো বা রান্নাঘর ও গাছপালা ভেঙে দিয়েছে। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। কষ্টের যেন শেষ নেই।  

ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা করা হচ্ছে। সব উপজেলায় চলছে ত্রাণ বিতরণ।

তিনি তথ্য দেন, ঝড়ে ৫ হাজার ঘর আংশিক ও ২ হাজার ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে কোটি টাকার মাছের ঘের ও ফসলি জমি। এছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত  হয়েছে ৩০টি, মাধ্যমিক ২টি সম্পূর্ণ এবং ৫৪টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কলেজ আংশিক ৪টি, মাদরাসা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  

কৃষি,মৎস্যের ক্ষতির পাশাপাশি ১১ কিলোমিটার বাঁধ এবং অসংখ্য কাঁচা-পাকা রাস্তার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তিনি।