আরসা’র কিলিং গ্রুপ কমান্ডার হাফেজ কামাল আটক

digitalsomoy

কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী রোহিঙ্গা বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র গ্রুপ আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি - আরসা’র জোন ও কিলিং গ্রুপ কমান্ডার হাফেজ কামাল ও তার দুই সহযোগীকে আটক করা হয়েছে।  এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি জি-৩ রাইফেল, একটি দেশীয় এলজি, সাত রাউন্ড গুলি ও একটি খালি কার্তুজ জব্দ করা হয়।মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাতে র‌্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ান র‌্যাব এ অভিযান চালায়।

আটকরা হলেন - ১৮ নম্বর শিবিরের মোহাম্মদ সাইফুল, আরসার জোন কমান্ডার হাফেজ কামাল (৩৫) ও অন্যতম দেহরক্ষী আনসার উল্লাহ (২০)।

বুধবার দুপুরে কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ ব্যাটালিয়ানের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের গোয়েন্দা শাখা ও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব হাফেজ কামালের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পায়। এ তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১৫ এর একটি দল উখিয়ার পালংখালীর রোহিঙ্গা বাজারের পাশে মরাগাছতলায় অভিযান চালিয়ে হাফেজ কামালের অন্যতম সহযোগী মোহাম্মদ সাইফুলকে আটক করে। তার স্বীকারোক্তি মতে উখিয়ার ৪ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে পুনরায় অভিযান পরিচালনা করে আরসার জোন কমান্ডার হাফেজ কামাল (৩৫),  অন্যতম দেহরক্ষী আনসার উল্লাহকে (২০) আটক করা হয়।

র‌্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সবাই সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরসা’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে খুন ও অপহরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

এদের মধ্যে সাইফুল বর্তমানে আরসার কিলিং গ্রুপ কমান্ডার হাফেজ কামালের অন্যতম সহযোগী ও দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করেন।

হাফেজ কামাল ২০১৭ সালে সীমান্ত পার হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে  সপরিবারে কুতুপালং শিবিরে বসবাস শুরু করেন। ২০১৮ সালের প্রথমে আরসার কমান্ডার হাফেজ আইয়াজের মাধ্যমে আরসায় যোগদান করে এবং ক্যাম্প-৪, ব্লক-ডি/৯ এর আরসার সাব জিম্মাদার হিসেবে নিয়োগ পান।  

পরে হাফেজ আইয়াজের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে প্রশিক্ষণের জন্য যান কামাল। ছয় মাস প্রশিক্ষণ শেষে  অবৈধভাবে বাংলাদেশে ফিরে এসে ক্যাম্প-৪, ব্লক-ডি এর আরসার জিম্মাদারের দায়িত্ব নেন।  

২০২২ সালে এপিবিএন পুলিশ কর্তৃক মাদকসহ গ্রেপ্তার হয় এবং চার মাস কারাভোগ শেষে পুনরায় ক্যাম্পে ফিরে আরসার জোন-১৭ এর তৎকালীন কমান্ডারের গান গ্রুপের সদস্য হিসেবে যোগ দেন। তারপর তিনি বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন।

সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা শিবিরে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের দিক-নির্দেশনা প্রদানসহ কিলিং গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে প্রত্যক্ষভাবে বিভিন্ন কিলিং মিশন ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন।  

এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন নাশকতা, মারামারি, হত্যা, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি, অপহরণ, অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকে। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় ৭টি হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে মোট ১১টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।  

আটক আনসার উল্লাহ ২০১৭ সালে পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে প্রবেশ এবং ক্যাম্প-১৮ এ বসবাস শুরু করেন। তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আরসার সক্রিয় সদস্য এবং গ্রেপ্তার জোন কমান্ডার হাফেজ কামাল এর অন্যতম সহযোগী ও দেহরক্ষী।

আটক আরসা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, র‌্যাব জানায় বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে  আরসার সামরিক কমান্ডার হাফেজ নূর মোহাম্মদ, অর্থ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুস, গান কমান্ডার রহিমুল্লাহ প্রকাশ মুছা, অর্থ সমন্বয়ক মোহাম্মদ এরশাদ প্রকাশ নোমান চৌধুরী ও আবু তৈয়ব, কিলার গ্রুপের প্রধান নূর কামাল প্রকাশ সমিউদ্দিন, ইন্টেলিজেন্স সেলের কমান্ডার ওসমান গনি র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়।  

এছাড়াও লজিস্টিক শাখার প্রধান, গান গ্রুপের প্রধান, প্রধান সমন্বয়ক, অর্থ শাখার প্রধান, আরসা প্রধান নেতা আতাউল্লাহর দেহরক্ষী আকিজ, মৌলভী অলি আকিজ এবং গান গ্রুপ কমান্ডার জাকারিয়াসহ সর্বমোট ১১৮ জন আরসা সন্ত্রাসীকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে এবং তাদের  থেকে ৫৩.৭১ কেজি বিস্ফোরক, ৫টি গ্রেনেড, ৩টি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৫টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৭টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১৮৩ রাউন্ড গুলি, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, ৪টি হাত বোমা, ৪টি আইডি ও ৪৮টি ককটেল উদ্ধার করা হয়।