হতাশ দর্শক, প্রযোজক ও হল মালিক

digitalsomoy

ঈদ এলে ছবি মুক্তির হিড়িক লাগে প্রতিবছর। এটা আমাদের সিনেমার জন্য নতুন কোনো ঘটনা না। কিন্তু এবারের ঈদে ছবি মুক্তির পরিমাণ অতিমাত্রায়। ‘মৌসুমী’ হল মিলিয়ে ঈদের হল সংখ্যা দুইশর মতো। আর হাতেগোনা এই হলে মুক্তি পেয়েছে ১১টি সিনেমা! এক ঈদে এত ছবি মুক্তির বিষয়টি ভালোভাবে দেখেননি চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকে ও সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ। তাদের মতে, এই পরিমাণ হলে তিন বা সর্বোচ্চ চারটি ছবি মুক্তি পেলে ভালো হতো। একসঙ্গে এত ছবি মুক্তির খেসারত গুনছেন প্রযোজকরা। হল মালিকরাও দেখেনি লাভের মুখ। ফলে মুক্তির চার দিনের মাথায় তিনটি ছবির প্রদর্শনী বন্ধও করে দিয়েছে স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। হল মালিক ও প্রযোজকদের এই হতাশা দেখা গেছে ঈদে সিনেমা দেখতে আসা দর্শকদের মাঝেও। এবার ঈদে মুক্তি পায় ‘রাজকুমার’, ‘ওমর’, ‘কাজলরেখা’, ‘দেয়ালের দেশ’, ‘জ্বীন ২’, ‘লিপস্টিক’, ‘সোনার চর’, ‘মায়া; দ্য লাভ’, ‘মেঘনা কন্যা’, ‘আহারে জীবন’ ও ‘গ্রিন কার্ড’।

বরাবরের মতো শাকিব খানের সিনেমা সব দিক থেকেই এবারও এগিয়ে আছে। তার অভিনীত ‘রাজকুমার’ সিনেমা মুক্তি পেয়েছে সর্বোচ্চ ১২৬ হলে। হিমেল আশরাফ পরিচালিত এ ছবিতে শাকিব খানের নায়িকা কোর্টনি কফি। হিমেল-শাকিব জুটির ‘প্রিয়তমা’ দেখে ‘রাজকুমার’ দেখতে গিয়ে হতাশ হয়েছেন দর্শক। কারণ গল্পের গাঁথুনি ছিল নড়বড়ে। একটি গান নিয়েও হয়েছে সমালোচনা। গল্পের নড়বড়ে বিষয়টি ভালো লাগেনি খোদ শাকিবিয়ানদেরও। আর সাধারণ দর্শক তো হতাশই। এদিকে দেশের সর্ববৃহৎ মাল্টিপ্লেক্স চেইন স্টার সিনেপ্লেক্সের সাতটি শাখায় প্রদর্শিত হচ্ছে আটটি বাংলা সিনেমা। এই আট সিনেমার মধ্যে মাল্টিপ্লেক্সে সবচেয়ে বেশি শো পেয়েছে মিশুক মনি পরিচালিত ‘দেয়ালের দেশ’। সিনেপ্লেক্সের সব শাখা মিলিয়ে প্রতিদিন এর ১৭টি শো প্রদর্শন শুরু করে। সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রের মানুষরাও এই সিনেমা দেখে তাদের সোশ্যাল মিডিয়ার ওয়ালে মন খুলে ভালো লাগা প্রকাশ করছেন। নির্মাতা থেকে শুরু করে কলাকুশলীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এরই মধ্যে সোমবার স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, সর্বোচ্চ

সংখ্যক হল পাওয়া দেয়ালের দেশ ছবিটির অগ্রিম টিকিট বিক্রির রেশিও কম। তাই রাজকুমারের পর সর্বোচ্চ টিকিট বিক্রি হচ্ছে মোস্তফা কামাল রাজের ‘ওমর’-এর। কিন্তু ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। সিনেপ্লেক্সের ওয়েবসাইটে দেখা যায় অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে পেছিয়ে নেই দেয়ালের দেশ। বরং এগিয়েই রয়েছে। ছবিটিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ ও বুবলী। দেশজুড়ে এটি ১৩টি হলে চলছে। ‘ওমর’ ছবিটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১টি হলে মুক্তি পায়। সিঙ্গল স্ক্রিনে খুব একটা সুবিধা না করতে পারলেও মাল্টিপ্লেক্সে অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে ভালো অবস্থান বলে জানিয়েছেন সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ, শহিদুজ্জামান সেলিম, নাসির উদ্দিন খান ও দর্শনা বণিক। গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘কাজলরেখা’ লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যের স্মারক ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। কেবল দেশের মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সবচেয়ে বেশি মূল্যের ভিআইপি হলে চলছে ‘কাজলরেখা’। তারপরও দর্শকদের ভিড় খারাপ না। ঈদের এই সময়টাতে সব ছবিই দর্শক পাবেন। কাজলরেখার অনেক শো হাউসফুল গিয়েছে। গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘দর্শক যারাই সিনেমাটি দেখছেন, তারাই কথা বলছেন। ঈদের পর আমি ঢাকার সব সিনেমা হলে গিয়েছি। সরাসরি দর্শকদের সঙ্গে কথা বলেছি। দর্শক সিনেমাটি দেখে আপ্লুত। দর্শক ৪০০ বছর আগে ফিরে যাচ্ছেন। সিনেমাটি নিয়ে সব প্রজন্মের দর্শকদের মনে অনেক প্রশ্ন। তারা রোমাঞ্চিত। এটাই চেয়েছিলাম।’ সিনেমাটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মন্দিরা চক্রবর্তী, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, সাদিয়া আয়মান, শরিফুল রাজ, খায়রুল বাসার, গাউসুল আলম শাওনসহ আরও অনেকে।

জসিম উদ্দিন জাকির নির্মিত ‘মায়া : দ্য লাভ’ সিনেমাটি ঈদে নয়টি হলে মুক্তি পায়। জায়েদ খান অভিনীত ‘সোনার চর’ মুক্তি পায় সাতটি হলে। এর পরিচালক জাহিদ হোসেন। ভৌতিক গল্পের সিনেমা ‘মোনা : জ্বীন ২’ পেয়েছে ছয়টি হল। জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত এই ছবি পরিচালনা করেছেন কামরুজ্জামান রোমান। সিঙ্গল স্ক্রিনের পয়সা উসুল সিনেমা দাবি করা হচ্ছে আদর আজাদ ও পূজা চেরি অভিনীত ‘লিপস্টিক’। মাত্র ৭টি সিনেমা হলে মুক্তি পায় ছবিটি। ঈদের তৃতীয় দিন সিনেপ্লেক্সে থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় দুটি সিনেমা ‘আহারে জীবন’ ও ‘গ্রিন কার্ড’। ঈদের পঞ্চম দিন নামানো হয়েছে ‘মেঘনা কন্যা’ নামের আরও একটি সিনেমা।