বিশ্বের শীর্ষ ৫০ নারী নেতৃত্বের তালিকায় স্বীকৃতি পেলেন বাংলাদেশের শিফা

digitalsomoy

বাংলাদেশের কৃতী তরুণী সাবিতা বিনতে আজাদ শিফা বিশ্বের শীর্ষ ৫০ নারী নেত্রীর একজন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মনোনীত হয়েছেন ইনভিজিবল পাওয়ার ফিমেল লিডারশিফ ক্যাটাগরিতে। এই সম্মানজনক স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তি সংস্থা রোসাটম।

জানা যায়, রোসাটমের ওয়েবসাইটে বিশ্বের ৫০ নারী নেত্রী নির্বাচনের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। আবেদন প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করে রোসাটমের অধীনস্থ অবনিন্সক টেক একাডেমি। প্রাথমিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২২০ জন নারীকে বাছাই করা হয়।

আবেদনে শিফাকে জমা দিতে হয় তার পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতা, স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম, অর্জিত পুরস্কার-স্বীকৃতি, পেশাদারী কাজের অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন, গবেষণাকর্ম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার কাজের প্রমাণপত্র। দীর্ঘ কয়েক ধাপের এই প্রক্রিয়া শেষে তিনি বিশ্বের শীর্ষ ৫০ নারী নেত্রীর একজন হিসেবে নির্বাচিত হন।

গাজীপুরের মেয়ে শিফার বাবা আবুল কালাম আজাদ, যিনি দু’বার জাতিসংঘের স্কলারশিপপ্রাপ্ত এবং মস্কোর লুমুম্বা ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি অর্জন করেন। তার মা জনাবা সোহরাত বেগম গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন।

শিফা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কর্ম বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তার সেশন : ২০১৪-১৫। ভারতের মেঘালয়ের নর্থ ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটিতে গবেষণার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস এর প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

শিফার যাত্রা শুরু হয়েছে এক যুগেরও বেশি সময় আগে। বাবা-মায়ের স্বপ্ন এবং প্রায় ১৩ বছরের স্বেচ্ছাসেবী কাজের অভিজ্ঞতা তাকে সামনে এগিয়ে নিয়েছে। তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ওয়ার্ল্ড ভিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্সে গ্রান্ট একুইজিশন ম্যানেজমেন্টের লিড প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন। শিশুদের নিয়েও তার অসংখ্য কাজ রয়েছে।

বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের তরুণদের সফট স্কিল ও কমিউনিকেশন স্কিল উন্নয়নে কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন ভিলেজ ইমপাওয়ারমেন্ট নামে একটি সংগঠন, যেখানে তিনি ফাউন্ডার ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

শিফা একাধিকবার রাশিয়ায় আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে যোগ দিয়েছেন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সোচিতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইউথ ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশ থেকে ৮৫ জন তরুণ-তরুণীর সঙ্গে অংশ নেন। সেখানে তিনি কৃষ্ণ সাগর থেকে আর্কটিক সাগর পর্যন্ত ভ্রমণ করেন এবং সেই অভিজ্ঞতা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত হয়।

২০২৪ সালের মে মাসে মস্কোতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস কমিটিতে বাংলাদেশের হেড হিসেবে নেতৃত্ব দেন।

একই বছরের অক্টোবরে রাশিয়ার ওরেনবুর্গ শহরে অনুষ্ঠিত ইউরেশিয়া গ্লোবালে অংশ নেন, যেখানে বাংলাদেশকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে ক্লোজিং সেরিমনিতে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়।

শিফা ২০১৯-২০ সালে টোস্টমাস্টার্স ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব পাবলিক স্পিকিং প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্পিচ কনটেস্ট চ্যাম্পিয়ন হন। পরে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সেমিফাইনালিস্ট হিসেবেও লড়েছেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অ্যাডভান্সড টোস্টমাস্টার্স ক্লাবের নারী সভাপতি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে দুটি ক্লাবের কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

এছাড়াও তিনি ভারত ও নেপালে আন্তর্জাতিক বক্তা হিসেবে যোগ দিয়েছেন এবং নেপালের লাক্সমী ব্যাংকে বক্তৃতা দিয়েছেন।

নির্বাচিত ৫০ নারী নেত্রী অংশ নেবেন রাশিয়ার ওয়ার্ল্ড অ্যাটমিক উইক এবং আন্তর্জাতিক নারী নেতৃত্ব কর্মশালা ফিমেল লিডারশিপ ক্যাম্পে। এগুলো অনুষ্ঠিত হবে রাশিয়ার কালুগা ওবলাস্টের অবনিন্স শহরে, যা বেলারুশ সীমান্তের নিকটে।

ওয়ার্ল্ড অ্যাটমিক উইকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১০ হাজারেরও বেশি অংশগ্রহণকারী সমবেত হবেন রাশিয়ার পারমাণবিক শিল্পের ৮০ বছরের সাফল্য উদযাপনে। আর নারী নেতৃত্ব কর্মশালায় অংশ নেবেন শিফা এবং বিশ্বের অন্যান্য নির্বাচিত নারী নেত্রীরা। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য শিফার এই অর্জন নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণার এক দৃষ্টান্ত।

এই স্বীকৃতি প্রসঙ্গে শিফা বলেন, "এই সম্মান শুধু আমার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং বাংলাদেশের প্রতিটি তরুণ-তরুণীর সম্ভাবনার প্রতিফলন। আমি বিশ্বাস করি প্রত্যন্ত গ্রামের এক সাধারণ মেয়েও যদি সঠিক দিকনির্দেশনা, শিক্ষাগত সুযোগ ও মানসিক শক্তি পায়, তাহলে সে বিশ্বমঞ্চেও নিজের অবস্থান তৈরি করতে পারে। আমার যাত্রাটা ছিল চ্যালেঞ্জে ভরা, কিন্তু আমি কখনও থেমে যাইনি। এই অর্জন বাংলাদেশের প্রতিটি স্বপ্নবাজ নারীর জন্য উৎসর্গ করছি।"