নিজস্ব প্রতিবেদক: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আলম শিকদারের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। চাঁদাবাজি, অবৈধ বালু উত্তোলন, ঘাট দখল, মসজিদ কমিটি দখল, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সবকিছুতেই জড়িয়ে তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠছে। ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে, ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায় বিএনপি নেতা নুরুল আলম শিকদার নানাবিধ অপরাধ কর্মকান্ডর ফিরিস্ত।
অবৈধ বালু উত্তোলনে নদীভাঙনের হুমকি
কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ইউনিয়নের ছোট ফেনী নদীতে বসানো হয়েছে তিনটি ড্রেজার। রাতদিন চলছে বালু তোলা ও বিক্রি। অভিযোগ রয়েছে, শিকদারের প্রত্যক্ষ মদদেই এ অবৈধ ব্যবসা চলছে। এতে নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপকূল। ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়েছে এলাকার রক্ষাকবচ মুছাপুর ক্লোজার। প্রায় ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ছোট ফেনী নদীর ওপর ৫০৪ মিটার দীর্ঘ সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। সেই প্রকল্পের নাম করে সেতুর পাশ থেকেও বালু তুলছে শিকদারের লোকজন। প্রতিবাদ করলে যুবদল নেতা আবদুর রহিমকে মারধর করে আহত করে শিকদারের লোকজন।
জোর করে মসজিদ কমিটি দখলের অভিযোগ
বসুরহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের কমিটি দখলের অভিযোগও রয়েছে শিকদারের বিরুদ্ধে। মুসল্লিদের মতামত উপেক্ষা করে তিনি নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করে কমিটি গঠন করেছেন। জেলা বিএনপির সদস্য রফিক উল্যাহ বলেন, “এটি অবৈধ কমিটি। স্বৈরাচারের মতো দখল করা মসজিদ কমিটি আমরা মানি না।” মুসল্লিরাও এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
চর এলাহী ঘাটে চাঁদাবাজি ও অডিও ফাঁস
চর এলাহী ঘাটে প্রতিদিন কোটি টাকার চাঁদা আদায় হচ্ছে। মাছ, শাকসবজি ছাড়াও মাদক চোরাচালানের টাকার ভাগও যায় এই ঘাট থেকে। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এক অডিওতে ফাঁস হয়েছে ঘাট থেকে ওঠা টাকার কমিশন পাচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আলম শিকদারসহ জেলা নেতারা এবং প্রশাসনের কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তা। এই অডিও প্রকাশের পর থেকে নোয়াখালীবাসীর মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
সন্ত্রাস ও প্রশাসনে দমননীতি
অভিযোগ রয়েছে, থানায় মামলা করতেও শিকদারের অনুমতি নিতে হয়। তার আশ্রয়ে ইসমাইল তোতা, বাহাদুর তোতা প্রমুখ চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এলাকায় ত্রাস চালাচ্ছে। সম্প্রতি তারা যুবদল নেতা সাহাব উদ্দিন ইদ্রিসকে হত্যার চেষ্টা চালায়। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।
ভয়ে আতঙ্কে এলাকার সাধারণ মানুষ
চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দখল, অবৈধ বাণিজ্য ও সহিংসতায় জড়িয়ে এখন তিনি কোম্পানীগঞ্জের “গডফাদার” হিসেবে পরিচিত। এলাকাবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে এ অবস্থার প্রতিকার চেয়েছেন। কিন্তু কথিত আছে, শিকদার আবারও উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটির সভাপতি হওয়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষের ভীতির মাত্রা আরও বেড়েছে।