এক বছরে রেকর্ড ১৭ হাজার কোটি টাকা জব্দ

digitalsomoy

গত এক বছরে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ জব্দ করেছে। দেশে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক লুটপাট, ঋণ কেলেঙ্কারি এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ দেখা দিয়েছে। গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত তদন্তে বিএফআইইউ একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৩ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে অন্তত ১,৫৭৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এসব হিসাবের মধ্যে ১,৬৮০ কোটি টাকা এবং ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল, যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ শুধু ব্যাংক হিসাব থেকে জব্দ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১,৭১৬ কোটি টাকা। এছাড়া ১৮৮টি বিও হিসাব থেকেও প্রায় ১৫,৫০০ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এক বছরে জব্দ করা অর্থের মোট পরিমাণ প্রায় ১৭,১০৯ কোটি টাকা।

দেশের ভেতরের জব্দ অর্থের পাশাপাশি, সরকারের অভিযান বিদেশেও সম্প্রসারিত হয়েছে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ১৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ৪৬ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড এবং ২৯১ মিলিয়ন ইউরো সমপরিমাণ অবৈধ সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। এসব বিদেশি মুদ্রার সমন্বিত পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। জব্দ সম্পদ বাংলাদেশের অনুরোধে আন্তর্জাতিক আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় সংগৃহীত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা চলছে, এবং আদালতের রায় শেষে এসব সম্পদ ফেরত পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এত বিপুল অঙ্কের অর্থ জব্দ হওয়া দেশের জন্য ইতিবাচক হলেও কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে। অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করছে, তবে জব্দ অর্থ ব্যবহারযোগ্য করতে হলে আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ। অর্থনীতিবিদরা বলেন, জব্দ অর্থ দ্রুত রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যুক্ত হলে এটি বাজেট ঘাটতি কমাতে এবং উন্নয়ন প্রকল্পে কাজে লাগানো যেতে পারে।

সরকারকে বিশেষভাবে দুই বিষয় অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রথমত, আইনগত প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল বা ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্টের ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতে অর্থ পাচার রোধে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিভিত্তিক নজরদারি সম্প্রসারণ করলে পাচারের প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।